সংবাদ শিরোনাম

কুয়াকাটা সৈকতে বিপন্ন বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ


হোসাইন আমির,কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ-
কুয়াকাটা সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ। সৈকতের ২২ কিঃমিঃ বিস্তৃর্ণ এলাকার অন্তত ৫ টি জোনে ডজন খানেক মরা কচ্ছপ দেখতে পেয়েছে স্থানীয়রা।গঙ্গামতি, কাউয়ারচর,লেম্বুরচর,মীরাবাড়িও মাঝিবাড়ি পয়েন্টে সামুদ্রিক কচ্ছপের মরদেহ কুকুরে খাচ্ছে। পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে পুরো সৈকত এলকায়।স্থানীয় জেলেদের ধারণা, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে উপকুলের কাছাকাছি এসে জালে আটকা পড়ে মরে যাওয়া এসব জলজ প্রাণীগুলো বালুতে আটকা  পড়ে আছে। বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, মরা কচ্ছপগুলো যাতে করে দুর্গন্ধ না ছড়ায় সে ধরণের ব্যবস্থা নিবে বনবিভাগ।
জেলেদের সংগঠন আশার আলো সমবায় সমিতির সভাপতি নিজাম শেখ জেলেদের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, রামনাবাদ ও আন্ধারমানিক চ্যানেলের নদীর সংযোগস্থলও সমুদ্রের মোহনায় অবাধ বিচরণ সামুদ্রিক কচ্ছপের। ডিম পাড়ার জন্য বেলাভুমিতে আসার সময় জেলেদের জালে আটকা পড়ে এগুলো মারা যেতে পাওে সেখানকার জেলেদের প্রাথমিক ধারণা। কুয়াকাটা সৈকতের লেবুর চর, ঝাউবন, গঙ্গামতি কাউয়ার চর এলাকার ২০জন জেলের সাথে কথা বললে তারা জানায়, গত ৪-৫ দিন ধরে কুয়াকাটা সৈকতে ১২-১৪ টি মরা কচ্ছপ দেখতে পেয়েছে। এছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমসহ গত বছরে অন্তত ৫ টি শুশুক, ১২ ডলফিন, ২টি তিমিসহ সেটেশান প্রজাতির বড় বড় মাছ মরে পঁচে দুর্গন্ধ ছড়িয়েছে।
কচ্ছপ, বন্যপ্রানী ও সামুদ্রিক প্রাণী আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করা গোড়াআমখোলা পাড়ার আদিবাসী জেলে মংএথান. অংচানতেন ও হিরো বলেন, কচ্ছপের ডিম পাড়ার সময় এখন। কচ্ছপরা গভীর সমুদ্র থেকে ডিম ছাড়তে উপকূলে কাছাকাছি এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে মরা পড়তে পারে বলে এমন আশংকার কথা জানিয়েছেন তারা।
উপকূলীয় বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক লতিফ মোল্লা আক্ষেপ করে বলেন, যে কোন মূল্যে কচ্ছপ প্রজাতির জলজ প্রাণী বাঁচিয়ে রাখা পরিবেশের জন্য খুবই জরুরী। পরিবেশবাদী সংগঠক লতিফ মোল্লা আরোও বলেন, ওসব জলজ প্রাণী রক্ষায় কুয়াকাটার জেলেসহ নানা পেশার মানুষদের নিয়ে সচেনতামূলক কর্মশালার দাবী তোলেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সুপ্রকাশ চাকমা জানিয়েছেন, কচ্ছপ প্রজাতীর এসব জলজ প্রানী জীবনের পুরো সময়টা গভীর সমুদ্রে কাটালেও ডিম পাড়ার সময় উপকুল বা নদীর মোহনায় আসতে হয়। জেলেদের জালে আটকা, জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাধীনভাবে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা,পানি দূষণ, খাদ্য সংকট, পায়রা বন্দরে অবাধে জাহাজ চলাচল, সমুদ্র বা নদী ভাঙ্গণ- কি কারণে মারা যাচ্ছে এটি গবেষনা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তবে  যে কারণেই হোক বিলুপ্তি হচ্ছে ওইসব জলজ প্রাণী। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় মাটি চাপা দেবার পরামর্শ দেয় ফিশারিজ বিভাগের ওই শিক্ষক।
বাংলাদেশ জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী বৈচিত্র প্রকল্প’র সিনিয়র ইডুকেশন অফিসার ফারহানাবলেন, জলজ প্রাণি রক্ষায় পনের জেলেকে ক্যামেরা ও আটটি মাছ ধরার ট্রলারে জিপিএস মেশিন সরবারহ করা হয়েছে। মৃতদেহটি উদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য  বাংলাদেশ জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী বৈচিত্র প্রকল্প (বিসিডিপি) দলের হট লাইনে খবর দেবার অনুরোধ করেছি।
পটুয়াখালী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, সমুদ্রের প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসম্য রক্ষা করে ওই সব জলজ প্রাণী। ওইসব জলজ প্রাণীর জন্য  নিরাপদ আবাসস্থল তৈরীর জন্য সীমানা নির্ধারণ করা হবে। পায়রা সমুদ্র বন্দরে জাহাজ চলাচলে ফলে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা তৈরী না করে সামুদ্রিক প্রাণীদের সেসব বিষয়ে শিগগিরই বন্দর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।###

Post a Comment

Previous Post Next Post