নিজস্ব প্রতিবেদক- গনসংগীতশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা আক্কাস হোসেন ১৯৩৮ সালের ৫ এপ্রিল ঝালকাঠি জেলার দক্ষিণ মানপাশার এক রক্ষণশীল সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আসল উদ্দিন সরদার এবং মাতা আমেনা খাতুন। ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে আক্কাস হোসেন নবম।
ছোটবেলা থেকে নাটক ও সংগীতের প্রতি আক্কাস হোসেন-এর আগ্রহ অনেক। তবে পারিবারিকভাবে এসব বিষয়ে তিনি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাননি। গোপনে নাটক ও সংগীত শেখা শুরু করেন তিনি। নাটকে গুরু ছিলেন সেরাজুল সুলতান ও আব্দুল মালেক খান। আক্কাস হোসেন-এর অভিনীত নাটকের সংখ্যা প্রায় ৫০-এর উপরে।
১৯৫০-এর দশকে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। পরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৫৬ সালে বৃহত্তর বরিশালে জেলা আওয়ামী লীগের সমাজসেবা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে তিনি জেলা আওয়ামীল লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঝালকাঠি জেলা ‘বাকশালে’র সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আক্কাস হোসেন তৎকালীন বরিশালের একমাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্পী সংসদে’ শহীদ আলতাফ মাহমুদের সাথে গণসংগীত পরিবেশন করেন। আলতাফ মাহমুদ ১৯৫৭ সালে বরিশাল ছেড়ে যাওয়ার পরে দক্ষিণ জনপদের গণসংগীত পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেন আক্কাস হোসেন। বৃহত্তর বরিশাল ছাড়াও বাইরের বিভিন্ন জেলায় গণসংগীত পরিবেশন করেও অনেক সুনাম অর্জন করেন তিনি।
জেনারেল আইয়ুব খান ‘মার্শাল ল’ জারি করলে কোনো শিল্পীই পহেলা বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ, ২১ ফেব্র“য়ারি ও ১২ জ্যৈষ্ঠ পালন করার সাহস করেনি। কিন্তু বিপুল সাহস নিয়ে আক্কাস হোসেন-সহ কয়েকজন মিলে তারা এসব দিবস পালন করেন। এছাড়া ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন, বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা এবং বঙ্গন্ধুকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ ইত্যাদি আন্দোলন-সংগ্রামে যুক্ত থাকার কারণে চার বছরের অধিককাল কারাবন্দী থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে বৃহত্তর বরিশাল জেলার সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও সচিবালয়ের উপ-প্রধান হিসেবে আক্কাস হোসেন দায়িত্ব পালন করেন। দেশকে স্বাধীন করার স্বপ্ন বুকে ধারণ করে ১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। সংগঠক হিসেবে ৯নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা নিয়োগ ও শরণার্থী অভ্যর্থনা কেন্দ্রের ‘কর্মদক্ষ’ হিসেবে বনগ্রাম, ২৪ পরগনা ও পশ্চিম বাংলায় সাত মাস দায়িত্ব পালন করেন আক্কাস হোসেন।
বর্তমানে তিনি বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ করে বরিশাল বেতার কেন্দ্রে নিয়মিত অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন। এছাড়া ‘দৈনিক পরিবর্তন’ পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন ইতিহাস ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি নিয়ে উপ-সম্পাদকীয় পাতায় প্রায় দুই শত কলাম লিখেছেন আক্কাস হোসেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে বৃটিশ বিরোধী সংগ্রামী নেতা মনোরঞ্জন গুপ্ত এবং কাটপোট্টির হরন্দ্রকুমার নাগের সাথে আক্কাস হোসেন বরিশালে চলে আসেন। তাঁদের কাছ থেকে তিনি যে সমস্ত বই ও বর্ণনা পান এবং ১৯০৬ সালে বরিশালে যে প্রতিবাদ সভা হয়, তা নিয়ে পরবর্তীতে তিনি উপসম্পাদকীয় পাতায় ধারাবাহিকভাবে যেসব কলাম লিখেছেন সেগুলো একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশ করার ইচছা ছিল আক্কাস হোসেনের । আক্কাস হোসেন বিভিন্ন সময় যেসব দায়িত্ব পালন করেছেন:
১. সহকারী কমান্ডার: মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বরিশাল জেলা কমান্ড।
২. সভাপতি: একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বরিশাল জেলা শাখা।
৩. সদস্য: কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
৪. প্রধান উপদেষ্টা: সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, বরিশাল বিভাগীয় শাখা।
৫. সভাপতি: বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বরিশাল বিভাগীয় কমিটি।
৬. সদস্য: বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।
৭. সভাপতি: বাংলাদেশ সাহিত্যের আড্ডা।
৮. আহক্ষায়ক: বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, বরিশাল মহানগর শাখা।
৯. সভাপতি: প্রান্তিক সংগীত বিদ্যালয়।
১০. সভাপতি: সুজনÑসুশাসনের জন্য নাগরিক, বরিশাল জেলা কমিটি।
১১. সদস্য: সুজনÑসুশাসনের জন্য নাগরিক, কেন্দ্রীয় কার্য-নির্বাহী কমিটি।
১২. সভাপতি: বরিশাল মুক-বধির সংঘ।
১৩. সভাপতি: বরিশাল মুক-বধির বিদ্যালয়।
১৪. সভাপতি: কনজুমারর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বরিশাল জেলা শাখা।
১৫. সভাপতি: সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদ, বরিশাল।
১৬. সভাপতি: উদ্বাস্তু আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়, আউটার স্টেডিয়াম, বরিশাল।
১৭. সভাপতি: পিপলস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (পিডিও), বরিশাল।আরও অন্যান্য সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন ।
তিনি বরিশালের ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ সামসুল হক ভূঁইয়ার ৬ নম্বর কন্যা কে বিয়ে করেন ।আক্কাস হোসেনর স্ত্রী ৯ ছেলে ও ১ মেয়ে কে রেখে গেছেন ।এই কিংবদন্তী মানুষটি ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন ।তার মৃত্যুতে বরিশালে শোকের ছায়া নেমে আসে। তার রুহের মাগফেরাত কামনায় সকলের নিকট দোয়া চেয়েছেন তার পরিবার।
Post a Comment