মামুনুর রশীদ নোমানী :
ঝালকাঠির রাজাপুর থানায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে আদালতের বিচারক শেখ আনিছুজ্জামান রাজাপুর থানার ওসিকে মামলাটি এফআইর হিসেবে রেকর্ড করে তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে পাঠানোর নির্দেশ দেন। নির্যাতিত ছাত্রীর মা আম্বিয়া বেগম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, রাবেয়া খাতুন নামের ৭ম শ্রেণির ওই মাদ্রাসা ছাত্রীর বাড়ি রাজাপুর উপজেলার পুটিয়াখালী গ্রামে। তার বাবা কাসেম হাওলাদার একজন মৎস্যজীবী, মা আম্বিয়া বেগম গৃহিনী। গত ১৭ মার্চ বিকেলে আম্বিয়া বেগমকে মারধর করে তার লাগানো বিভিন্ন ফলের গাছ কেটে নিয়ে যায় পাশ্ববর্তী নুরুজ্জামান বেপারী ও তার লোকজন। এ ব্যাপারে গত ১৮ মার্চ মা আম্বিয়া বেগম রাজাপুর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে এএসআই আবুল কালাম তাকে ওসির সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিয়ে বলেন, ‘কাগজপত্র আর পাচঁ হাজার টাকা আমার কাছে রেখে যান, যা করার সব আমি করে দেব।’ আম্বিয়া বেগম টাকা দিয়ে বাড়ি চলে যান। ঘটনার তিন চারদিন পার হলেও কোন মামলা না হওয়ায় আম্বিয়া বেগম মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে এএসআই আবুল কালাম বলেন, ‘আরও পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে।’ ২-৩ দিন পর আম্বিয়া বেগম রাজাপুর থানার সামনে এসে আরও পাঁচ হাজার টাকা দেন।
দুই দফায় টাকা লেনদেনের কথোপকথনের বিষয়টি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে রাখে কিশোরী রাবেয়া খাতুন, এ অভিযোগ করা হয় আদালতের মামলায়। এএসআই আবুল কালাম দশ হাজা টাকা নিলেও রাজাপুর থানায় মামলা রেকর্ড না করিয়ে একটি জিডি করেন এবং জিডি তদন্তের অনুমতি চেয়ে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন। জিডির বিষয়ে আম্বিয়া বেগমকে তলব করেন আদালত। গত ৭ এপ্রিল আম্বিয়া বেগম আদালতে হাজির হয়ে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বলেন। পরের দিন একই আদালতে গাছ কেটে নেওয়া ও মারধরের বিষয়ে আদালতে একটি সিআর মামলা দায়ের করেন আম্বিয়া বেগম। আদালতের বিচারক সিআর মামলাটি রাজাপুর থানায় এফআইআর হিসেবে রেকর্ডের নির্দেশ দেন। ১৬ এপ্রিল এ বিষয়ে রাজাপুর থানায় এফআইআর রেকর্ড হয়।
এতে আম্বিয়া বেগমের ওপর ক্ষিপ্ত হন এএসআই আবুল কালাম। বিষয়টি জানতে পেরে গত ২৪ এপ্রিল মা বাবাসহ কিশোরীকে রাজাপুর থানায় ডেকে এনে বকশির কক্ষে নিয়ে তার মায়ের সামনে মারধরে করেন এএসআই আবুল কালাম ও এক নারী কনেস্টবল। মারধরের পর কিশোরীর মোবাইল থেকে মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেন আবুল কালাম
মামালার অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, মারধরের ও নানা অশ্লীল গালিগালাজ করে প্রায় দেড় ঘণ্টা তাদের থানায় আটকে রাখেন আবুল কালাম। এরপর অনেক অনুনয়-বিনয়ের পর হাসপাতালে না যাওয়ার শর্তে কিশোরীকে ছেড়ে দেন আবুল কালাম।
তবে অভিযুক্ত রাজাপুর থানার এএসআই আবুল কালাম সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, কোন একটি কুচক্রি মহলের বুদ্ধিতে এসব মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে তাকে অযথা হয়রানি ও হেয় করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাজাপুর থানার ওসি মোঃ জাহিদ হোসেন জানান, শুনেছি কোর্টে মামলা হয়েছে, তবে থানায় এরকম কোন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি।
আদালতের কোন নির্দেশনা (মামলার কপি) পাননিও বলে জানান তিনি।
Post a Comment