আজকাল বার্তা ডেক্স----
বাংলাদেশে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে মানুষজনকে ধরে নিয়ে যাওয়া বা অপহরণের অভিযোগ প্রায়ই ওঠে। অনেক সময় এভাবে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করা হয় বা হত্যা করা হয়।
অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়ার বেশ কিছুদিন পর তাদের বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাহলে কিভাবে বুঝবেন পুলিশ বা প্রশাসনের লোক আপনাকে গ্রেফতার করতে আসছে কিনা। আসুন জেনে নেয়া যাক এর ইতি কথা।
গত কয়েক বছরে পুলিশ, ডিবি বা র্যাব পরিচয়ে প্রতারণা, অপহরণের অভিযোগেও অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার বা আটকের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য কি কি নিয়ম রয়েছে? আসুন সেগুলো আগে জেনে নেই। যারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিচ্ছে, তারা সত্যিই পুলিশ বা র্যাবের সদস্য কিনা, সেটাই বা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে?
কখন পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে?
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, কোন অপরাধে হাতেনাতে ধরলে, তদন্তে প্রমাণ পেলে, আইন ভঙ্গের অভিযোগ উঠলে বা মামলা হলে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করতে পারে।
আদালতের নির্দেশনাতেও পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারে। এছাড়া কারো কর্মকাণ্ড সন্দেহজনক, বা রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর মনে করলে পুলিশ ৫৪ ধারা অনুযায়ী গ্রেপ্তার করতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স ও মিডিয়া) মোঃ হায়দার আলী খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''পুলিশ কয়েক ভাবে গ্রেপ্তার বা আটক করে। একটি হচ্ছে আদালতের নির্দেশনায়। এছাড়া কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা হলে, কোন অপরাধে সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে, এবং তদন্তে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থানার তথ্যপ্রমাণ পেলে তাকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারে পুলিশ।''
হত্যা, অপহরণ, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধে কেউ জড়িত থাকলে ঘটনাস্থলেই কোন মামলা বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে।
''তবে যেভাবেই গ্রেপ্তার করা হোক না কেন, কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ আছে, সেটা পুলিশ ওই ব্যক্তিকে জানাবে। আর সেই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদেরও প্রমাণ করতে হবে যে, তারা সত্যিকারের পুলিশ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা বলছেন, ''সিআরপিসির ৮০ ধারা অনুযায়ী, কাউকে গ্রেপ্তারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা দেখতে চাইতে পারেন, এটা তার অধিকার। তবে ওয়ারেন্ট ছাড়াও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে।''
তিনি জানান, সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে কারণ না জানিয়ে আটক রাখা যাবে না।
''তবে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ না হচ্ছে যে, তিনি অপরাধী, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আসলে নির্দোষ। সেজন্য তাকে নানাভাবে অধিকার দেয়া হয়েছে.'' - বলছেন ব্যারিস্টার সানজানা।
অভিযুক্ত ব্যক্তিকে থানায় আনার তিন ঘণ্টার মধ্যে থানায় আনার অভিযোগ পত্র পেশ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের জানাতে হবে যে, কোন থানায় কেন তাকে আটক রাখা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে আইনগত পরামর্শ করার জন্য সুযোগ দিতে হবে।
গ্রেপ্তারের সময় পোশাক যাচাই করা
বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ী বা সাধারণ মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। অনেক সময় এভাবে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে। বিভিন্ন সময় ভুয়া র্যাব, ভুয়া ডিবি বা ভুয়া পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বাহিনীগুলো।
উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স ও মিডিয়া) মোঃ হায়দার আলী খান বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''অপরাধীরা যখন অপরাধ করে, তখন তারা বিভিন্ন রকমের পদ্ধতি অনুসরণ করে। তারা চেষ্টা করে যেন তাকে সত্যিকারের পুলিশ, ডিবি বা র্যাবের লোক বলে মনে হয়। পুলিশ কীভাবে কাজ করে, তাদের পোশাক তো সবাই দেখতেই পায়।''
সাদা পোশাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়?
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলেও সেখানে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য পুলিশ।
আটকের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেয়া ব্যক্তিদের আচরণ সন্দেহজনক হলে, তারা পরিচয় প্রকাশ করতে না চাইলে আশেপাশের মানুষের সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
২০১৬ সালের ২৪শে মে ৫৪ ও ১৬৭ ধারায় গ্রেপ্তার সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মন্তব্য করেছিলেন যে, সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার 'ভয়াবহ' এবং কাউকে গ্রেপ্তার করার সময় ইউনিফর্ম ব্যবহার করতে হবে। আটকের তিন ঘণ্টার ভেতর কারণ জানাতে হবে।
পুলিশ সদস্যদের কাছে পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে তারা অনেক সময় খারাপ ব্যবহার করে বা দেখাতে চান না বলে অভিযোগ ওঠে।
এই প্রসঙ্গে মি. খান বলছেন, ''আমি অস্বীকার করতো না যে, কখনো কখনো পুলিশের সদস্যরা রিয়্যাক্ট করে ফেলেন। তবে কারও বিরুদ্ধে মিসবিহেভ করা বা খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠলে আমরা সেটা তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।''
স্থানীয় থানা পুলিশ বা ৯৯৯ নম্বরের সহায়তা
পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, কখনো কোন পুলিশের দলের আচরণ বা সাদা পোশাকে থানা দল নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলে স্থানীয় থানা বা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে যাচাই করে দেখা যেতে পারে।
তারা কোন থানা বা অফিস থেকে এসেছেন, টিমের প্রধানের নাম জেনে রাখা যেতে পারে।ডিআইজি মোঃ হায়দার আলী খান পরামর্শ দেন, সাদা পোশাকে আসা পুলিশের বিষয়ে সন্দেহ হলে স্বজন বা আশেপাশের লোকজন স্থানীয় থানায় বা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে পারেন। তখন সেখান থেকেই তাদের নিশ্চিত করা হবে যে, পুলিশের কোন দল সেখানে গেছে কিনা। স্থানীয় জনতার যদি সন্দেহ হয় যে, এরা সত্যিকারের পুলিশ নয়, তাহলে তারা তাদের আটক করেও থানায় খবর দিতে পারেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হলে ঘনিষ্ঠ কোন স্বজন বা বন্ধুকে জানিয়ে রাখুন। স্বজন বা প্রতিবেশীরা প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট টিমের ছবি বা ভিডিও করে রাখতে পারেন।
সংগ্রহ/ সূত্র--- বিবিসি বাংলা
Post a Comment