ঝালকাঠির গনি বয়াতি, স্মৃতি সংগ্রহ ও স্বীকৃতির দাবী


অনলাইন ডেক্স---
  বাংলাদেশের জারী সম্্রাট ঝালকাঠির কৃতী সন্তান আব্দুল গণি বয়াতী। মরহুম গণির পরিবার সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সংকটের অভাবে আজ পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারেনি তার স্মৃতি সংগ্রহশালা। তার গান ও স্মৃতিকে রক্ষা করে গ্রাম গঞ্জের মানুষের মাঝে বিল্পুপ্তির পথে জারী গানকে আবরো প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। যা এই মুহুর্তে সমাজে জঙ্গী ও মৌলবাদ এবং অপসাংস্কৃতি দূর করতে শক্ত ভূমিকা রাখতে পারে। আবার গ্রামে গ্রামে খোলা মঞ্চ আর গানের পালা বসিয়ে অবসর বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। এভাবেই সামাজিক সচেতনতা মূলক গান রচনা করে মানুষকে জাগ্রত করা সম্ভব। মাটি, মানুষ ও দেহতত্ত গানের এখনো চাহিদা আছে। কিন্তু সুযোগের পাশাপাশি অনুমতি মিলছেনা। এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মরহুম জারী স¤্রাট গণি বয়াতীর ছেলে আঃ হক বয়াতী বাবার অজানা অনেক তথ্য তুলে ধরলেন এ প্রতিবেদকের কাছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ২০১৭ সনে এই গুণী ব্যক্তিত্বের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে একুশে পদক পাবার আবেদন করেও আজ পর্যন্ত পায়নি। ১৯৫১ সন। ঢাকায় সারা দেশের ১৩৭টি জারী দল প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। সেখানে তাৎক্ষণিক ভাবে কৃষি ও কৃষকের উপর গান রচনা করতে বলা হয় আব্দুল গণি বয়াতীকে। তিনি তার উপর নির্ধরিত বিষয়ে গান রচনা করে প্রথম স্থান এবং স্বর্ণপদক পেয়ে জারী সম্্রাট উপাধীতে ভূষিত হন। তার পরে ১৩৬৩ সন। ঝালকাঠিতে দূর্ভিক্ষের চিত্র দেখতে আসেন জাতীয় নেতা মাওলানা ভাষানী। তার উপস্থিতিতে দূর্ভিক্ষের উপর স্বরচিত গান রচনা ও পরিবেশন করেন গণি বয়াতী। গান শুনেই মাওলানা ভাষানী বাংলাদেশ বেতারে গণি বয়াতীকে নিয়মিত গান গাওয়ার সুযোগ করে দেন। এখনো মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, স্বনির্ভর বাংলাদেশ ও স্বাধীনতার বিষয়ে তার লেখা একাধিক গান প্রকাশিত হয়নি। যা পান্ডুলিপি সহকারে তার ছেলে আঃ হক বয়াতির কাছে সংরক্ষিত আছে। ঘরের বাড়ান্দায় কিছু জিনিষ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু চির নিদ্রায় শায়িত এ গুণী শিল্পীকে নিয়ে বসত বাড়িতে আজ পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন গবেষনা ভবন এবং তার স্মৃতি বিজরীত সংগ্রহশালা তৈরী করা সম্ভব হয়নি। পারিবারিক সূত্রে জানাযায়, হঠাৎ করে নয় বংশানুক্রমেই বয়াতী পরিবারের সন্তান ছিলেন গণি বয়াতী। দাদা ফটিক চাঁন বয়াতীর মৃত্যুর পর তার ছেলে সোনা মদ্দীন বয়াতী জারী গান গাইতেন। তার মৃত্যুর পর সন্তান আব্দুল গণি বয়াতী জারী স¤্রাট হিসাবে উপাধী পান। এরপর তার সন্তান আঃ বারেক বয়াতী বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখেন। সব শেষ এখন অপর সন্তান আঃ হক বয়াতী জারী গান করছেন। গুণী শিল্পী আব্দুল গণি বয়াতী ১৯৭৯ সনে ১৯ আগষ্ট মারা যান। তার মৃত্যুর পর ২০০০ সনের ১০ জুন বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ঝালকাঠি এসে স্বর্ণপদক প্রদান করেন। বাংলা মায়ের কৃতী সন্তানের ৯৯ জনের তালিকায় গণি বয়াতীর নাম ৪৭ নম্বরে। জারী ও পল্লীগীতিতে অবদান রাখায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান গভর্ণর কর্তৃক স্বর্ণ পদক প্র্াপ্ত হন। ১৯৪৫ সনে এই শিল্পীর দূর্ভিক্ষ পরিস্থিতির উপর গান বেতারে প্রচার হয়ে ছিল। যা শুনে তৎকালীন ডিএম নূরনবী চৌধূরী ১০ একর সম্পত্তি দান করেন গণি বয়াতীকে। সেই সম্পত্তি এখন বেহাত। আব্দুল গণি বয়াতীর জন্ম বার্ষিকী ২রা বৈশাখ। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নরুল্লাপুরে মিলিত হয় ভক্ত ও শিষ্যরা। তাদের নিয়ে দিনভর আলোচনা, মিলাদ, দোয়া ও জারী গানের আসর জমে উঠে। তার বাড়িতে যে সব বিখ্যাত কবি সাহত্যিকের আগমন ঘটে তাদের মধ্যে কবি আসাদ চৌধূরী, পল্লীগীতি লেখক আঃ লতিফ, মোস্তফা জামান আব্বাসি, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সনে তার ছেলে আঃ হক বয়াতী ‘গণি বয়াতী শিল্পী সংঘ’ নামে একটি সংগঠন করেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে গণি বয়াতির গানকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে চাইলেও আর্থিক সংগতি না থাকায় মুখ থুবরে পড়ে কার্যক্রম। মরহুম গণি বয়াতীর সন্তান আঃ হক বয়াতী বলেন, আমাদের বংশ পরম্পরায় এ পেশা ধরে রাখলেও এখন তা বিলুপ্তির পথে। অন্য কেহ জারী গানে আগ্রহী হচ্ছেনা। কারন অপসাংস্কৃতির দাপটে বাঙ্গালী সাংস্কৃতি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। গণি বয়াতীর প্রায় ২৫০ জন শিষ্য জারী শিল্পী ও তাদের সহযোগীরা এখন বেকার হয়ে পরেছে। তিনি আরো বলেন, বাবার লেখা গান গুলো যদি গাওয়ার সুযোগ পাই, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তার অসমাপ্ত গানের পান্ডুলিপি সমাপ্ত করে গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে দিতে পারি, রেডিও টেলিভিশনে দল নিয়ে গাইতে পারি তাহলেই বাবার স্মৃতি ধরে রাখা সম্ভব। পাশাপাশি গ্রাম গঞ্জে মঞ্চ করে টিকিট দিয়ে জারী গানের পাল্লা হলে আবার বাঙ্গালী সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। অপসংস্কৃতি এতটা ছড়িয়ে পরতো না। সরকারি সহযোগীতা ছাড়া এর কিছুই সম্ভব নয়। আমাদের সরকারের প্রতি আবেদন বাবাার স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে বসত বাড়িতে একটি পাকা স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মানের। পাশাপাশি এই গুনী শিল্পীকে মরোনত্তোর একুশে পদক দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক। এ প্রসঙ্গে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন খান বলেন, আমাদের এই কৃতি সন্তান আব্দুল গণি বয়াতীর স্মৃতি ধরে রেখে তার জারী গানকে সমাজে ছড়িয়ে দিতে পারলেই তার মূল্যায়ন হতে পারে। তবে এজন্য অবশ্যই দরকার সরকারি উদ্যোগ। পাশাপাশি এই গুণী শিল্পীর স্মৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসা উচিত সমাজের ধনাঢ্য ব্যক্তিদেরও।

Post a Comment

Previous Post Next Post