মনির হোসেন,মোংলাঃ
মংলা বন্দরের হারবারিয়া সংলগ্ন নন্দবালা খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাল্কহেড ভর্তি ভারতীয় শাড়ি কাপড় জব্দ করেছে কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন। এছাড়াও সুন্দরবনের গোনারী এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও কালাবগী এলাকায় হরিণের চামড়া জব্দ করাসহ খুলনার রুপসার খান জাহান আলী সেতু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৮০ লাখ টাকার চিংড়ি পোনা আটক করা হয়েছে। এছাড়াও ৩২৩ পিস ইয়াবাসহ ২ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে।
কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, শনিবার (১৭ আগস্ট) ভোরে খুলনার খান জাহান আলী সেতু এলাকা দিয়ে ট্রাক ভর্তি চিংড়ি পোনা পাচার করা হতে পারে এমন সংবাদ গোপন সূত্রে জানার পর ওই দিন গভীর রাত থেকেই ওই এলাকায় অবস্থান নেয় কোস্টগার্ড সদস্যরা। শনিবার (১৭ আগস্ট)সকালের দিকে খান জাহান আলী টোল প্লাজা এলাকা অতিক্রম করার সময় কোস্টগার্ড সদস্যরা একটি ট্রাককে চ্যালেন্জ করে। এমন সময় ট্রাকে থাকা লোকজন দ্রুত পালিয়ে যায়। ওই ট্রাক গাড়িতে তল্লাশি করে বড় ড্রাম ভর্তি ৮০ লাখ টাকা মূল্যের ৪০ লাখ পিস রেণু পোনা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত রেনুপোনা রুপসা উপজেলা মৎস্য অফিসের প্রতিনিধি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর উপস্থিতিতে নদীতে অবমুক্ত করা হয়।
একই দিনে,গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গভীর রাতে কোস্টগার্ডের একটি আভিযানিক দল নিয়মিত টহলদানের সময় সুন্দরবন সংলগ্ন কালাবগী খাল সংলগ্ন এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি হরিণের চামড়া পাওয়া যায়। চোরা শিকারীরা হরিণ শিকার করে পাচারের সময় কোস্টগার্ড বাহিনীর তৎপরতার কারনে সেখানে হরিণের চামড়া ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। জব্দকৃত হরিণের চামড়া সুন্দরবনের নলিয়ান ফরেস্ট অফিসের কাছে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে।
এদিকে, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সমুদ্র পথে অবৈধভাবে বাল্কহেড ভর্তি ভারতীয় শাড়ি কাপড়ের একটি বিশাল চালান মংলা বন্দর এলাকা দিয়ে পাচার করা হবে গোপন সূত্রে এমন সংবাদ জানার পর গত শনিবার (৩ আগস্ট) বিকাল থেকেই ওই এলাকায় ছদ্মবেশে অবস্থান নেয় কোস্টগার্ড বাহিনীর অপারেশন টিমের সদস্যরা। সারারাত অবস্থান করার পর রবিবার ভোর রাতের দিকে হারবারিয়া চ্যানেলের নন্দবালা খাল এলাকায় একটি বাল্কহেড দেখে ওই নৌযানে থাকা কয়েক জন চোরাকারবারীকে চ্যালেন্জ করে কোস্টগার্ড সদস্যরা। এসময় বাল্কহেডে অবস্থান করা চোরাকারবারীরা কোস্টগার্ড বাহিনীর প্রতিরোধের মূখে টিকতে না পেরে নদীতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে এম ভি মারিয়া নামের ওই নৌযানে তল্লাশী করে বস্তাভর্তি ২৪ হাজার ৪৯৫ পিস শাড়ি,৩১ পিস লেহেঙ্গা, ১১৯ পিস ফ্রক ও ৭৬ পিস প্লাজো জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত শাড়ী কাপড় ও বাল্কহেড কোস্টগার্ড বেইজে আনার পর সেখান থেকে মংলা থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
জব্দকৃত শাড়ি কাপড় ও বাল্কহেডটির আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন।
জব্দকৃত শাড়ি কাপড় ও বাল্কহেডটির আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি ৫৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা বলে জানিয়েছে কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন।
অন্যদিকে পূর্ব সুন্দরবনের গোনারী এলাকায় গত (৩ আগস্ট) শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র (বিদেশী বন্দুক) জব্দ করেছে মংলা কোস্টগার্ড বাহিনী পশ্চিম জোন।
কোস্টগার্ড বাহিনীর পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব সুন্দরবনের গোনারী এলাকায় ডাকাতির উদ্দেশ্যে একদল দস্যু অবস্থান করছে গোপনসূত্রে এমন তথ্য জানার পর ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে কোস্টগার্ডের অপারেশন টিমের সদস্যরা। শনিবার সকালের দিকে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় পৌঁছলে দস্যুদলের সদস্যরা কোস্টগার্ডকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তারাও পাল্টাগুলি চালায়। উভয়পক্ষের গুলি বিনিময়ের একপর্যায়ে দস্যুরা বনের গহীনে পালিয়ে গেলে সেখান থেকে ১টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। জব্দকৃত অস্ত্র ও গুলি পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাকোপ থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
অন্যদিকে গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় মংলার দিগরাজ কলেজ রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়ন মোল্লা নামের এক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ৩০৪ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। এছাড়াও গত ১৯ আগস্ট সকালের দিকে খুলনার রুপসা খান জাহান আলী সেতু এলাকায় অভিযান চালিয়ে হৃদয় (২১) নামের আরেক ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ১৯ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে।
কোস্টগার্ড বাহিনীর গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকার বিভিন্ন রুটে চোরাচালান কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ায় কোস্টগার্ড বাহিনীর পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কঠোর নজরদারির কারনে বড় ধরনের ভারতীয় শাড়ি কাপড়ের চালানটি আটক করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে লেফটেন্যান্ট আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু, বনদস্যুদের তৎপরতারোধে কোস্টগার্ড বাহিনীর নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর বিভিন্ন দস্যুবাহিনীর আস্তানায় কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান পরিচালনা দেশী বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে। অনেক সময় দেখা যায়, দস্যুরা আগেভাগেই কোস্টগার্ডের উপস্থিতি টের পেয়ে আস্তানা থেকে পালিয়ে যায়। আর গত জুলাই মাস এবং আগস্ট মাসে আমরা বিপুল পরিমান ইয়াবা ও গাঁজাসহ ৭ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
উল্লেখ্য, দেশের উপকূলীয় এলাকার জনগনের সার্বিক নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী।
উল্লেখ্য, দেশের উপকূলীয় এলাকার জনগনের সার্বিক নিরাপত্তায় অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী।